কুমিল্লায় রাখি বন্ধন উৎসব অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ভাই-বোনের সম্পর্ক মজবুত করতে রাখতে থালায় রাখি, মিষ্টি, প্রদীপ, সিঁদুর, লাল সুতো, ধান ও দূর্বা দিয়ে সাজিয়ে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ সামাজিক অনুষ্ঠান রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়। শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরীতে জেলা আইনজীবী সমিতির পরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার এর বাসায় ঘরোয়া পরিবেশে এ উৎসব পালিত হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- জেলা আইনজীবী সমিতির পরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার এর একমাত্র মেয়ে অর্পিতা সরকার রাখি বন্ধনের মাধ্যমে তাঁর ছোটভাই অরন্য সরকার প্রিন্স এর দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্য কামনা করেন। তদ্রুপ ভাইও বোনকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিন পরিবারের সকলে একত্রে মিলিত হয়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার দাবার ও উপহারের ব্যবস্থা করা হয়। রাখি উৎসবকে ঘিরে পরিবারের সব্বাই মিলে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠে।
জানা যায়- প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্মে ভাই-বোনের ভালবাসার প্রতীক এই উৎসব। এই পবিত্র দিনে বোন ভাইকে রাখী বেঁধে দেয় এবং ভাই বোনকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরফলে ভাই-বোনের মধ্যে ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনকে দৃঢ় শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানে ভাইদের পাশাপাশি বোনরা নতুন পোশাক পরিধান করে এবং মিষ্টি মুখ করানোর মধ্যদিয়ে ভাইয়ের হাতে রঙ বেরঙের সুতো বা রাখি বেঁধে দেয়। পরিবর্তে ভাই বোনদেরকে উপহার দিয়ে থাকে। এই দিনে ভাই-বোনের সম্পর্ক আজীবন রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ভাইয়ের ডান হাতের কব্জিতে বোনেরা পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়।
আরও জানা যায়- রাখি বন্ধন বা রাখি পূর্ণিমা উৎসবটি ভাই-বোনদের পবিত্র সম্পর্কের এক নিবিড় উদযাপন। তবে বর্তমানে শুধুই ভাই-বোনদের মধ্যে এই উৎসব সীমাবদ্ধ নেই। জাতি বর্ণ ধর্ম র্নিবিশেষে পারষ্পারিক সৌহার্দ্য-সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্যেও রাখি পূর্ণিমা পালিত হয় থাকে। রাখি পূর্ণিমার ঠিক পাঁচদিন আগে ঝুলন পূর্ণিমা শুরু হয় এবং রাখি পূর্ণিমার সাতদিন পর জন্মাষ্টমী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের এই দুই লীলার মাঝে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয় বলে এর আরেক নাম শ্রাবণী পূর্ণিমা। এই দিনটির জন্য প্রত্যেক ভাইবোন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। বোন ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেয় আর ভাই বোনকে রক্ষার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়। এই ভাবেই এই অনুষ্ঠিত যুগের পর যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে। রাখি বন্ধন মূলত বিহারী সংস্কৃতি হলেও পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠান বাঙালি সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পরে।
মহাভারতে বর্ণিত, এক যুদ্ধে কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। ফলতু দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোনের মর্যাদা দেন। এই উৎসবটি ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও মধুর করে তোলে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।