1. admin@songbadsaradesh.com : songbad :
কোরআন ও হাদিসের আলোকে বর্ষাকাল প্রস্তাবনা. - সংবাদ সারাদেশ
৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| শরৎকাল| সোমবার| দুপুর ১২:৩২|
শিরোনাম :
হারানো বিজ্ঞপ্তি বরুড়ায় স্বেচ্ছাসেবীদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত বরুড়ার মুকুন্দপুরে অগ্নিকান্ডে গবাদিপশু ও বসতঘর পুরে ছাই বরুড়ায় সেচ্ছাসেবীদের মিলনমেলা শরীয়তপুরে মিয়া নুরুদ্দিন অপুর জন্মদিন পালন করলেন নুরুজ্জামান বেপারী সিলেট মহানগর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ,ফ্যাসিস্টের দোসররা জামায়াতকে কলুষিত করতে ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে —মাওলানা হাবিবুর রহমান দেবীদ্বারে আট সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা!মোবাইল- ক্যামেরা ছিনতাই, ১২ জন আহত না ফেরার দেশে চলে গেলেন কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জসিম উদ্দিন লালমাইতে মেম্বাররা ভাতা থেকে বঞ্চিত, জবাব দিতে পারেন নাই চেয়ারম্যান, দু:খজনক বললেন ইউএনও….. পর্ব -১ সন্ত্রাসীদের হামলায় বগুড়ায় নিহত যুবদল নেতা রাহুল সরকারের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

কোরআন ও হাদিসের আলোকে বর্ষাকাল প্রস্তাবনা.

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৯৫ টাইম ভিউ

কোরআন ও হাদিসের আলোকে বর্ষাকাল
প্রস্তাবনা.

সামিউল ইসলাম
সুপাঃ সিধুচী হিযবুল্লাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা,লালমাই ,কুমিল্লা
বর্ষাকাল পৃথিবীর জীবনের এক অপরিহার্য অধ্যায়। বর্ষা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস নয়, বরং মানবজাতি ও সমস্ত জীবজন্তুর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে বৃষ্টি ও বর্ষাকাল আল্লাহর এক বিশাল নিয়ামত, যা মানুষের প্রয়োজন মেটায়, জমিনকে উর্বর করে এবং জীবজগতকে সজীব করে তোলে। কোরআন ও হাদিসে বৃষ্টির মাহাত্ম্য, উপকারিতা, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দোয়া ও করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
১. কোরআনে বর্ষার মাহাত্ম্য
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কোরআনে বহু স্থানে বৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রমাণ করে বর্ষার গুরুত্ব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নিচে দেওয়া হলো—
1. সুরা নাহল (16:65):
“আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তা দ্বারা মৃত ভূমিকে জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে শ্রবণশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
এখানে বর্ষাকে মৃত ভূমির পুনর্জীবন ও আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
2. সুরা হাজ্জ (22:63):
3. “তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর ভূমি সবুজে আচ্ছাদিত হয়? নিশ্চয়ই আল্লাহ অদৃশ্যজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” এখানে বর্ষাকে আল্লাহর রহমতের প্রকাশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
4. সুরা আন-নূর (24:43):
“তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিত করেন, অতঃপর স্তূপীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা বের হয়। আর তিনি আকাশ থেকে শিলা বর্ষণ করেন, যা পাহাড় সদৃশ, অতঃপর তা তিনি যার উপর চান তার উপর পতিত করেন এবং যার থেকে চান তা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেবার উপক্রম হয়।”
বৃষ্টির সৃষ্টি ও মেঘের গঠন প্রক্রিয়াকে বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
5. সুরা আর-রূম (30:48):
“আল্লাহই বাতাস প্রেরণ করেন, যা মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, তারপর তিনি আকাশে যেভাবে চান ছড়িয়ে দেন, পরে তাকে স্তূপে পরিণত করেন; অতঃপর তুমি দেখ, তার মধ্য থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। আর তিনি তা দিয়ে যাদের ইচ্ছা তাদের পৌঁছে দেন।”
এ আয়াতে বৃষ্টির প্রক্রিয়া ও আল্লাহর পরিকল্পনার বর্ণনা এসেছে।
এই আয়াতগুলোতে বর্ষাকে শুধু প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং তাওহীদ ও আল্লাহর মহিমার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২. হাদিসে বর্ষার ফজিলত ও দোয়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ বৃষ্টি হলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন এবং বিশেষ দোয়া পড়তেন।
1. উপকারী বৃষ্টির দোয়া:
اللَّهُمَّصَيِّبًانَافِعًا
“হে আল্লাহ! এটিকে উপকারী বৃষ্টি করুন।”
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
2. বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়:
রাসূল ﷺ বলেছেন—
“দুটি দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: আজানের সময়ের দোয়া এবং বৃষ্টির সময়ের দোয়া।”
(আবু দাউদ, হাদিস 2540)
3. বৃষ্টির সময় রাসূল ﷺ-এর আমল:
আনাস (রা.) বলেন
“আমাদের ওপর বৃষ্টি হলে রাসূল ﷺ তাঁর কাপড় খুলে কিছু অংশে বৃষ্টিকে স্পর্শ করতে দিতেন এবং বলতেন, ‘এটি আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে সদ্য এসেছে।’”(সহিহ মুসলিম)
৩. বর্ষার উপকারিতা ইসলামের দৃষ্টিতে
ইসলামে বর্ষার নানা উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে
· জীবনধারণের উৎস:পানির মাধ্যমে কৃষি, পশুপালন ও মানুষের প্রয়োজন মেটানো হয়।
· পবিত্রতা ও ইবাদতের সহায়ক:বৃষ্টির পানি পবিত্র, যা দিয়ে ওযু ও গোসল করা জায়েজ।
· প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা:বৃষ্টির মাধ্যমে তাপমাত্রা ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় থাকে।
কোরআনে বলা হয়েছে—“আর আমি আকাশ থেকে পরিমিত পরিমাণে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তা জমিনে স্থাপন করেছি।”(সুরা মুমিনুন 23:18)
৪. অতিবৃষ্টি ও বিপর্যয়: ইসলামের দিকনির্দেশনা
বর্ষা আল্লাহর রহমত হলেও, অতিবৃষ্টি কখনো পরীক্ষা ও সতর্কবার্তা হয়ে আসতে পারে—
· সাবধানতা:রাসূল ﷺ ঝড়-বৃষ্টি হলে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাইতেন।
· দোয়া:

اللَّهُمَّحَوَالَيْنَاوَلَاعَلَيْنَا
“হে আল্লাহ! আমাদের চারপাশে বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়।”(বুখারি, মুসলিম)
এতে বোঝা যায়, অতিবৃষ্টি বা বন্যা হলে আল্লাহর কাছে বিপদমুক্তির দোয়া করা সুন্নাহ।
৫. বর্ষার সময় আমল ও করণীয়
1. আল্লাহর শোকর আদায় করা।
2. বৃষ্টির সময় ও পরে দোয়া করা।
3. বৃষ্টির পানি থেকে বরকত নেওয়া।
4. গরীব-দুঃখীদের সহায়তা করা—কারণ বর্ষায় অনেকের কষ্ট বাড়ে।
5. গুনাহ থেকে তাওবা ও ইস্তিগফার—কোরআনে গুনাহ ও খরার সম্পর্ক উল্লেখ আছে(সুরা নূহ 71:10-11)।
বর্ষার আজাবে ধংশ যেসব জাতি
১. নূহ (আ.)-এর জাতি
গুনাহ:মূর্তিপূজা, অহংকার, নবী নূহ (আ.)-এর দাওয়াত অস্বীকার।
আজাব:আকাশ থেকে টানা প্রবল বর্ষণ ও জমিন থেকে পানি উদ্গীরণ হয়ে মহাপ্লাবন।
প্রমাণ:“অতঃপর আমি আকাশের দরজা খুলে দিলাম প্রবল বর্ষণকারী পানির সাথে, আর আমি জমিনকে উৎসারিত করলাম ঝর্ণার মত…”(সুরা ক্বামার 54:11-12)
২. আদ জাতি (হযরত হুদ আ.)
গুনাহ:অহংকার, অবাধ্যতা, আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকার।
আজাব:প্রথমে খরা, তারপর কালো মেঘ এনে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, যা ধ্বংস ডেকে আনে।
প্রমাণ:“যখন তারা কালো মেঘ দেখল যা তাদের উপত্যকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তারা বলল: এটা তো আমাদের জন্য বৃষ্টি। বরং এটা এমন কিছু যা তোমরা তাড়াতাড়ি চাইছিলে; এতে রয়েছে শাস্তি।”(সুরা আহক্বাফ 46:24)
৩. শু‘আইব (আ.)-এর জাতি (আয়কা ও মাদইয়ান)
গুনাহ:প্রতারণা, পরিমাপে কম দেওয়া, আল্লাহর অবাধ্যতা।
আজাব:প্রচণ্ড গরমের পর মেঘের ছায়া, তারপর বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টি ও আকাশীয় চিৎকারে ধ্বংস।
প্রমাণ:“তারা শাস্তির মেঘ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, আর শাস্তি ছিল এক ভয়ংকর দিনের।”(সুরা আশ-শু‘আরা 26:189)
৪. ফিরআউন ও তার সৈন্যবাহিনী
গুনাহ:আল্লাহর অবাধ্যতা, বনী ইসরাইলকে নির্যাতন, নিজেকে উপাস্য দাবি।
আজাব:নীল নদ ও সাগরের পানি দ্বারা ধ্বংস।
প্রমাণ:“তাদেরকে প্লাবিত করলাম এবং ডুবিয়ে দিলাম, কারণ তারা যালিম ছিল।”(সুরা আ‘রাফ 7:136)
৫. লূত (আ.)-এর জাতি(পরোক্ষভাবে পানি ও পাথরের আজাব)
গুনাহ:অশ্লীলতা, সমকামিতা।
আজাব:আকাশ থেকে উল্টিয়ে দেওয়া শহরে বৃষ্টির মত পাথর বর্ষণ।
প্রমাণ:“আর আমরা তাদের ওপর কঙ্করের বৃষ্টি বর্ষণ করেছি।”(সুরা হিজর 15:74)
সারসংক্ষেপ
বর্ষা ও পানি আল্লাহর রহমত হলেও, ইতিহাসে এমন বহু জাতি আছে যারা অবাধ্যতা ও পাপাচারের কারণে বর্ষা বা পানিকে আজাব হিসেবে পেয়েছে। নূহ (আ.)-এর জাতি সরাসরি প্রবল বৃষ্টি ও মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়, আর আদ, আয়কা, ফিরআউনের জাতি প্রাকৃতিক জলীয় উপাদান ও ঝড়-বৃষ্টির মাধ্যমে শাস্তি পায়।
৬. বর্ষা থেকে শিক্ষা
· আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন চিনে নেওয়া।

· ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা অর্জন।

· মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি।

· দোয়া ও ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
৭. সারসংক্ষেপ
ইসলামে বর্ষাকাল শুধু একটি ঋতু নয়, বরং আল্লাহর মহা রহমতের নিদর্শন। কোরআন ও হাদিসে বৃষ্টি জীবনের উৎস, পবিত্রতার মাধ্যম এবং দোয়া কবুলের সময় হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তবে অতিবৃষ্টি হলে এটিকে পরীক্ষা হিসেবে ধৈর্য ও দোয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে। মুসলিমদের উচিত বর্ষার প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা এবং মানুষের কল্যাণে কাজ

সামিউল ইসলাম
সুপাঃ সিধুচী হিযবুল্লাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা,লালমাই ,কুমিল্লা Email:Mdreams730@gmail.com

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

Categories

© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ