রহস্যের জালে সেনাসদস্যের মৃত্যু: আত্মহত্যা, না কি কিছু লুকানো আছে?
হুমায়ুন কবির চৌধুরী
রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুর:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী—একটি পেশাদার, সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী। জাতির দুর্দিনে যেমন এ বাহিনী দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, তেমনি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনী বরাবরই উদাহরণ। কিন্তু সম্প্রতি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ও রহস্যজনক মৃত্যু—যা নীরব তোলপাড় তুলেছে সেনা সদস্যদের মধ্যে এবং উদ্বিগ্ন করেছে সাধারণ নাগরিকদেরও।
ঘটনাটি কী?
ঘটনার শিকার সেনাসদস্যের নাম সোরভ হোসেন (২৫)। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার গড়াগঞ্জ গ্রামে। তিনি ৩৫ বীর ইউনিটের একজন সৈনিক ছিলেন।
৩১ মে ভোর ৫টার দিকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় সেনানিবাসের একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে। গলায় গামছা ও রশি প্যাঁচানো ছিল, যা আত্মহত্যা সন্দেহকে সামনে আনে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এটা কি নিছক আত্মহত্যা, নাকি কিছু আড়ালে রয়েছে?
আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু?
সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত জায়গায় একজন সক্রিয় সেনাসদস্যের এমনভাবে মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
কেন একটি নির্মাণাধীন ভবনে?
রশি ও গামছা দুটোই ব্যবহারের মানে কী?
কোনো বিদায়ী নোট ছিল না কেন?
ব্যক্তিগত জীবনে কোনো মানসিক চাপ ছিল?
এগুলো আপাতদৃষ্টিতে তদন্তের বিষয়, তবে সমাজের অভ্যন্তরে গোপন সংকেতের আভাসও দেয়। পরিবার, সহকর্মী কিংবা ইউনিট কমান্ডের পক্ষ থেকেও এখনো স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।
পেশাদার বাহিনীতে মানসিক চাপ কি অবদমন হচ্ছে?
বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে—সামরিক বাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা ও চাপের মধ্য দিয়ে অনেক সৈনিক মানসিক অবসাদে ভোগেন। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও কি মনোসামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম যথেষ্ট? সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্য, কর্মপরিবেশ, অভ্যন্তরীণ অবিচার কিংবা বুলিং—এসব নিয়েও কি খোলামেলা আলোচনা হয়?
প্রাসঙ্গিকতা ও রাষ্ট্রের দৃষ্টি
একজন সৈনিক যখন আত্মঘাতী হন কিংবা তার মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়, তখন তা শুধুই ব্যক্তিগত বা বাহিনীর ব্যাপার নয়—তা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বের বিষয়। কারণ সেনাবাহিনী শুধু কেবল বাহিনী নয়, এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
এই মৃত্যুকে যদি আড়াল করা হয় বা "সাধারণ ঘটনা" বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, তবে প্রশ্ন জাগবে—সত্যকে জানার অধিকার কি আমরা হারাচ্ছি?
তদন্ত ও প্রত্যাশা
সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে।
আমরা চাই, এ ঘটনায় যেন নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়। প্রয়োজন হলে সেনা ও বেসামরিক যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। পরিবার যেন প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে। ভবিষ্যতে যেন কোনো সৈনিকের জীবন এভাবে ঝরে না যায়।
উপসংহার
এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, আবার বড় কোনো কাঠামোগত সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। আমরা প্রশ্ন করি না বাহিনীর প্রতি সন্দেহ নিয়ে, বরং প্রশ্ন করি তাদের মর্যাদা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে।
সেনাসদস্য সোরভ হোসেনের মৃত্যু যেন শুধু সংখ্যা না হয়ে যায়—বরং একটি শিক্ষা হয়ে উঠে। আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, আর চাই সত্য উদঘাটিত হোক।
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ