মোঃ বাহার উদ্দিন, একজন প্রবাসী। অনেক বছর পর দেশে আসবেন—নিজে ছিলেন খুশিতে আত্মহারা।
পরিবারও এই আনন্দে অনেকদিন ঘুমাতে পারেনি। স্ত্রী-সন্তানরা লিস্ট দিয়ে রেখেছিল—কি কি আনতে হবে।
সন্তানরা অপেক্ষায় ছিল—বাবা অনেক চকলেট নিয়ে আসবেন, খেলনা নিয়ে আসবেন।
বাবা কয়েক মাস ধরে কাজের ফাঁকে শপিং করতেন, হোয়াটসঅ্যাপে স্ত্রীকে দেখাতেন।
সন্তানরাও দেখত—বাবা কি দিয়ে লাগেজ ভরছেন।
প্রচণ্ড পরিশ্রমের ফাঁকে ফাঁকে শপিং করাটাই ছিল বিশাল আনন্দের।
বাবা আসবেন—বাড়িতে তখন ঈদের আমেজ।
এলাকার সবাই জানত—মোঃ বাহার উদ্দিন আসছেন।
অনেক বছর সন্তানদের নিয়ে একা থাকা স্ত্রীর আনন্দের সীমা ছিল না।
ওমান থেকে ফেরত এসেছিলেন প্রবাসী মোঃ বাহার উদ্দিন।
ঠিকই এসেছেন—বিমানে লাগেজ নিয়ে, এয়ারপোর্টের কাস্টমস পার হতে কোনো সমস্যাই হয়নি।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর বাবাকে দেখে সন্তানদের খুশি দেখে কে!
শুধু স্বামীকে এত বছর পর দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন স্ত্রী।
মাকে আর সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন মোঃ বাহার উদ্দিন।
আড়াই বছর পরে দেশে ফেরার সময়
“স্বপ্ন যাবে বাড়ি”
—এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ফেসবুকে।
অনেক লাইক-কমেন্ট হয়েছিল। এখনো হচ্ছে।
মোঃ বাহার উদ্দিনকে আনতে তাঁর পরিবারের সাতজন একসাথে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন একটি গাড়ি নিয়ে।
এর মধ্যে ছিল তাঁর ছোট মেয়ে, স্ত্রী, মা এবং আরও কয়েকজন।
দেশে এসে মোঃ বাহার উদ্দিন সাহেব
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় শাস্তি পেলেন।
বেঁচে থেকেও যেন মৃত।
মোঃ বাহার উদ্দিনের দিনগুলো এখন কাটছে কবর খুঁড়ে,
প্রিয়জনকে জানাজা দিয়ে, দাফন করে, কুলখানির অপেক্ষায়।
একসাথে এত সমুদ্র-সমান ব্যথা সহ্য করতে হবে—
এটাই কি ভাগ্য?
এর নামই কি জীবন?
এই কি আমাদের দেশ?
এটাই কি আমাদের প্রতিদান?
বাসায় যাওয়ার পথে রোড অ্যাক্সিডেন্টে সাতজন প্রাণ হারালেন—
তাঁর মেয়ে, স্ত্রী, মা—সবাই মারা গেলেন।
বেঁচে গিয়েছেন আমাদের প্রবাসী মোঃ বাহার উদ্দিন ভাই।
মাইক্রোবাস চালক নিজে দরজা খুলে পালিয়ে গেছে।
তাঁরা বারবার অনুরোধ করলেও প্যাসেঞ্জার ডোর খুলে দেয়নি।
এটা একটা দুর্ঘটনা—এটা হবেই, এটাই বলবেন?
এর উপর কারও হাত নেই?
তাহলে বছরে কতটা দুর্ঘটনা হয়?
এমপি, মন্ত্রী, সচিব, ডিসি, এসপিদের গাড়িতে তো এমন হয় না!
বাংলাদেশে গড় হিসেবে, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
দেশে গাড়ির ফিটনেস নেই, বিমানের নেই, যুদ্ধবিমানের নেই,জাহাজের নেই, চালকের নেই।
এগুলো যারা চেক করবে, তাদেরও তো ফিটনেস নেই!
গরিব এভাবে মরবে—এটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
দেশে অনেক ভালো রাস্তা আছে, ব্রিজ আছে, ফ্লাইওভার আছে—
নেই শুধু জীবনের নিরাপত্তা।
আমি আরও লিখলে কি হবে?
এই দেশে সবকিছু টাকায় বেচা যায়,
সবকিছু কেনা যায়।
স্বপ্ন বাড়ি পৌঁছায়নি।
বাড়ি পৌঁছেছে খালি ব্যাগ, ছিন্ন হৃদয়,
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ