মাদক আমাদের জীবনে একটি অভিশাপের নাম।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর এর স্বিদ্বান্ত অনুসারে প্রতি বছর ২৬ শে জুন আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসাবে পালিত হয়।এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বিশ্বকে মাদকমুক্ত করা ও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করা।এ বছর ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ” আসুন সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সুস্থ জীবন গড়ি।” সবাই যার যার অবস্থান থেকে আসুন মাদক কে রুখে দিতে হবে।মাদক নির্মুল করা আমাদের সবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।বন্ধুর আবদার রক্ষার্থে ধুমপান থেকে শুরু হওয়া মাদকাসক্ত তরুন ধীরে ধীরে গাঁজা, আফিম, ফেনসিডিল,হিরোইন কিংবা লেটেষ্ট ভার্শন সর্বনাশা ইয়াবার ছোবলে পরিবার সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।শুরুতে মাদক যদিও মাদকসেবীর নিয়ন্ত্রণে থাকে সময়ের বিবর্তনে একজন মাদকসেবী মাদকের দাসে পরিণত হয়।চাইলেই তা ছাড়তে পারেনা।বিপথগামী মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী ঐশী কর্তৃক বাবা মাকে নিশংসভাবে খুনের ঘটনা আমরা সবাই জানি।ঐশী নিজে ও ধ্বংশ হলো তার ভাইয়ের জীবন ও অনিশ্চিত হলো।আমরা মনে করছি আমাদের কিছুই ক্ষতি হচ্ছে না কিন্তু দিন শেষে দেখবেন এই ভয়াল মাদক যত ছড়াবে তত আপনার আমার এলাকার শান্তি নষ্ট হবে।হাদিস শরীফে এসেছে প্রত্যেক নেশাজাত দ্রব্যই হারাম।( সহিহ মুসলিম হাদিস নং ২০০৩)।
মাদকের প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান সরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়–মাদকাসক্ত তরুন কর্তৃক.
০১।খুন, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বাড়ছে।
০২।ইভটিজিং বাড়ছে।
০৩।পারিবারিক কলহ ও মারামারি বাড়ছে।
০৪।রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে মাদকাসক্ত তরুণেরা ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাদক বন্ধে আমাদের করণীয়।।………
০১।সামাজিক ভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।ব্যক্তিগতভাগে আসক্তির কারনগুলো চিহৃিত করতে হবে।
০২।শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
০৩।খেলাধূলায় উৎসাহ দিতে হবে।
০৪।যুবসমাজকে সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।
০৫।মাদকের সহজলোভ্যতা রোধ করতে হবে।
০৬।মাদকাসক্ত কে পুন:প্রতিষ্ঠা করতে দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।
০৭।মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রয়োজনে ভর্তি করে পুনর্বাসন করতে হবে।
০৮। সন্তানকে উপযুক্ত বন্ধু নির্বাচনে মনিটরিং ঠিক রাখতে হবে।
০৯। ইতিবাচক জীবন যাপনে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।মাদক সেবনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে।
১০। মসজিদের ইমাম খতিব থেকে শুরু করে সামাজিক দায়িত্বশীল, রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ, শিক্ষক,সচেতন নাগরিক কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
১১।মাদক নির্মুল কমিটি গ্রামে গ্রামে পাড়া, মহল্লায় গড়ে তুলতে হবে।
১২। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও মাদক নির্মুল কমিটি কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সভা সেমিনার ও লিফলেট, পোষ্টার এর মাধ্যমে মাদক নির্মুলে করণীয় শীর্ষক প্রচার প্রচারনা করতে হবে।।
১৩। সাংবাদিকদের মাদক বন্ধে প্রচারণায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
মাদকাসক্ত বা মাদক বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এলাকায় খুবই কম কিন্তু ওরা সংঘবন্ধ।আমরা সচেতন হয়ে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুললে এটি বন্ধ করা খুব কঠিন হবেনা।
মাদকাসক্ত কিংবা মাদক বিক্রির সাথে জড়িতদের সাথে কোমল ও কঠিন আচরণ দুই-ই করতে হবে।পাশে থেকে ফিরে আসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।।তাহলেই মাদক নির্মুল পুরোপুরি না হলেও প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।মাদক একটি জাতীয় সমস্যা তাই স্বমূলে ধ্বংস করতে হলে সব মহলের সমন্বিত ঐক্য, সচেতনতা,সময়োপযোগী স্বিদ্বান্ত ও স্বদিচ্ছা সবার আগে প্রয়োজন।
মাদক থেকে বাঁচতে এক্সপার্টদের পরামর্শ সাথে বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা, মানুষিক সাপোর্ট ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।আমরা মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে নয় বরং মাদক কে না বলি।
লেখকঃ মোঃ আনিসুর রহমান সোহেল
অধ্যক্ষ, গোপালনগর আদর্শ কলেজ, ব্রাহ্মণপাড়া,কুমিল্লা।
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ