০৫/০৯/২০২৫রোজ শুক্রবার রাজবাড়ীতে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে তা এ অঞ্চলে অশ্রুতপূর্ব। এই লোক মারা গেছে গত ২৩ শে আগস্ট।
১২ ফুট উঁচু স্থানে তাকে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়েছে। তার কবর নির্মাণ করা হয় পবিত্র কাবা শরিফের আদলে। সুস্থ্য থাকা কালেই নুরুল পাগলা নিজেই ১২ ফুট উঁচু বেদি তৈরি করেন। এটা নিয়ে স্থানীয় উলামা, সাধারণ মুসুল্লিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়।
ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। উত্তেজনা প্রশমনে প্রশাসনের সাথে একাধিকবার আলোচনায় বসে। আলোচনায় প্রথমে নুরুলের পরিবার এক সপ্তাহ সময় নিলেও এ ব্যাপারে তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। গত দুই তারিখে প্রথম আলোয় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
দুদিন আগে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিলেও কোনো উত্তর পায় নি স্থানীয়রা। ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করা হয়। তাতে দাবিটা করা হয় কা'বার আদলে নির্মিত এই কবরের উপরের কাঠামো ভেঙে সমান করে দেওয়ার জন্য।
সংবাদ সম্মেলন হয়, সেখানে জেলা জামায়তের আমির উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতারা ছিলেন। তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর সমতল করাসহ বিভিন্ন দাবি জানায়।
অন্যথায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিক্ষোভে বিএনপি'র গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও বক্তব্য দেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজকে মিছিল হয়। তাতে একদল লোক শাবল, বড় হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজির হয়।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী 'এ সময় উপস্থিত আলেম–ওলামা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও ওই লোকজন মিছিল নিয়ে নুরুল হকের বাড়ির দিকে রওনা হয়।'
দুপক্ষে সংঘর্ষ হয়। ভিডিওতে দেখা গেছে কবর থেকে লাশ তুলে পেটানো হয় পরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
কা'বার আদলে কবর নির্মাণ করে সেটাকে নিজের কা'বা বানাতে চাইলে সেটা মেনে নেওয়ার কোনও সুযোগ নাই। আবরাহাও ইয়েমেনে নিজের কাবা নির্মাণ করেছিল। আল্লাহ আবরাহাকে ধ্বংস করেছেন। ডিভাইন ইন্টারভেনশন বলে একটা বিষয় আছে। আল্লাহ ছাড় দিবেন না।
এখানে জনক্ষোভ বুঝে প্রশাসনের তড়িৎ হস্তক্ষেপের আগেই প্রয়োজন ছিল। আজকে প্রশাসন বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনের গাড়ি ভাংচুর হয়েছে।
যে দাবি ছিল কাবার আদলে নির্মিত কবর সমতল করার, সে দাবির প্রতি বাংলাদেশের মুসলমানদের সমর্থন আছে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা যে কাজ করেছে এ কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বরং ভিন্ন দিকে গেছে।
ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান হচ্ছে লাশকে কোনও ভাবেই পুড়ানো যাবে না। কবরস্থ করতে হবে অথবা বিশেষ পরিস্থিতিতে সমুদ্রে বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে।
আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, 'আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।' ধর্ম হিসেবে ইসলাম কখনও হিউম্যান ডিগনিটি'র প্রশ্নে কোনও ছাড় দেয় না।
প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণে শৈথিল্য এবং নূরুল পাগলার পরিবারের কবর প্রসঙ্গে গোয়ার্তুমিও এই পরিস্থিতিকে জটিল করেছে।
কিন্তু যারা উলামায়ে কেরামের বাধা উপেক্ষা করে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়েছে এই ব্যাপারকে লেজিটিমেসি দেওয়া যাবে না। মবের কোনও সীমা পরিসীমা বোধ নেই।
কবর থেকে তুলে লাশ পুড়ানোর ঘটনার এই বাড়াবাড়িকে এমনি এমনি যেতে দেওয়া যাবে না। কোনও পক্ষকেই সীমালঙ্ঘনের পথে যেতে দেওয়া যাবে না।
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ