মনিরুল হক চৌধুরী;কুমিল্লার গণমানুষের নেতাঃ——
একটু পেছনে যাই। সাল ১৯৭৯। প্রেসিডেন্ট জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর দেশের সংসদীয় নির্বাচন।মনিরুল চৌধুরীও প্রার্থী।আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন কর্ণেল আনোয়ার উল্লাহ।আরো প্রার্থী ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ, সূয়াগাজীর ঐতিহ্যবাহী পরিবারের মানুষ জামালউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির হয়ে প্রার্থী ছিলেন একই পরিবারের আমানউদ্দিন চৌধুরী।চৌদ্দগ্রামের ৪টি ইউনিয়ন ও কোতয়ালীর ৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ছিল সেটি।বিএনপির প্রার্থী সে নির্বাচনে মাত্র তিন হাজারের মতো ভোট পান।আওয়ামী লীগের আসনখ্যাত এই এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্ণেল আনোয়ার উল্লাহ’র নিকট বাকীসব প্রার্থীই হেরে যান।
১৯৮৮ তে সংসদ সদস্য হয়ে মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লার গণমানুষের পাশে দাঁড়ান।সে আসনটি অবশ্য এর আগেই পুনর্বিন্যাস হয়,সদর তথা কোতয়ালীর ৬ টি ইউনিয়ন ও লাকসামের ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে।কুমিল্লার সার্বিক উন্নয়নে মনিরুল হক চৌধুরীর নেওয়া উদ্যোগ মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।
রাজনীতির বিরাট পট পরিবর্তনের পরও মনিরুল হক চৌধুরী ১৯৯১ এর নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এই আসনটি(কুমিল্লা-৯) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।তাঁর সঙ্গে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে।সে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সূয়াগাজীর ঐতিহ্যবাহী পরিবারের মানুষ শ্রদ্ধেয় রাবেয়া চৌধুরী,তিনি মোট ভোট পান ১০ হাজারের মতো।মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লার উন্নয়নের কান্ডারির ভুমিকা নেওয়ায় ও তাঁর স্বভাবজাত আন্তরিক-বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে সেইবার এলাকার মানুষ তাঁকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেন।
১৯৯৬ এর জুনের নির্বাচনে একই আসনে মনিরুল হক চৌধুরী জাতীয় পার্টিরই প্রার্থী হন।নব্য আওয়ামী লীগার কথিত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী লোটাস কামাল বাগমারা ইউনিয়নের সবকটিসহ মোট ৭ টি ভোটকেন্দ্র দখল করে বিজয়ী ঘোষিত হন।মনিরুল হক চৌধুরীকে ‘হারতে হয়’ ছাব্বিশ’র মতো ভোটের ব্যবধানে।সে নির্বাচনে মতিউল ইসলাম মন্টু বিএনপির হয়ে লড়েছিলেন, ভোট পেয়েছিলেন আড়াইহাজার। মনিরুল হক চৌধুরীকে অন্যায়ভাবে হারিয়ে দিলে মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত হলেও তাঁদের নেতাকে হারাননি।সেইবারের আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি হয়ে লোটাস কামাল—-মনিরুল হক চৌধুরী ও তাঁর অনুসারী স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর মামলাসহ নানান অত্যাচার করতে থাকেন।মনিরুল হক চৌধুরী এমপি না হয়েও সুখে-দু:খে এলাকার মানুষের পাশে থাকেন।মনিরুল হক চৌধুরীকে বিএনপিতে যোগদানের জন্য বেগম জিয়া ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চেষ্টা বরাবরই ছিল।কারণ বিএনপি সারাদেশেই গণমানুষের ভিত্তিমূলের দলে পরিণত হয়ে হওয়া সত্বেও এই আসনটিতে বিএনপির তেমন কোনো অবস্থানই ছিল না।
২০০১ এর নির্বাচনের আগে বিএনপিতে মনিরুল হক চৌধুরীর যোগদান ও বেগম খালেদা জিয়া সূয়াগাজীর ঐতিহাসিক জনসভায় মনিরুল হক চৌধুরীকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা এবং নির্বাচনে মনিরুল হক চৌধুরীর বিজয়লাভ। জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়েই মনিরুল হক চৌধুরীর বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে এ আসনে মূলত বিএনপির ভিত্তিমূল গড়ে উঠে।জনগণ ভোট দিয়ে একথা প্রমাণ করেন —‘মনিরুল হক চৌধুরীই আমাদের নেতা’।একটি বিষয় উল্লেখ্য মনিরুল হক চৌধুরীর ছেড়ে আসা জাতীয় পার্টির প্রার্থী সূয়াগাজীর ঐ একই পরিবারের সেলিম চৌধুরী মাত্র পাঁচ’শ ভোট পাওয়ায় প্রমাণ হয়-মনিরুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অত্র এলাকায় কতখানি !
২০০১ এ বিএনপি সরকার গঠন করে ও মনিরুল হক চৌধুরী তাঁর এলাকার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন।ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়ে ৪ লেনে রুপান্তরের প্রকল্প গ্রহণ,কুমিল্লা শহরসহ বেশকটি ওভারপাস প্রকল্প বাস্তবায়ন উদ্যোগ,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন,টমছমব্রিজ থেকে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল জাঙ্গালিয়ায় স্থানান্তর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা,পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ উপজেলা গঠন সে সময়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও উন্নয়ন।এলাকার গণমানুষ সত্যিই আরো দৃঢ়ভাবে মনিরুল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিতে থাকেন।
এরপর ১/১১ পরবর্তী ২০০৮ এর নির্বাচন।ভারতের গভীর ষড়যন্ত্রের এই নির্বাচনে মনিরুল হক চৌধুরী অংশ নেননি। উপরুন্তু মনিরুল হক চৌধুরীকে তাঁর গড়া সংসদীয় এলাকার বাইরে রাখতে এলাকাটিকে বরুড়া উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অংশত তিন উপজেলার অদ্ভূত এক আসনে তৈরি করা হয়েছিল।এরপরতো আওয়ামী লীগের কারসাজি ও ভুয়া ভোটের তিন-তিনটি নির্বাচন। পুরো দেশবাসীই ভোটবঞ্চিত।তবে এর মধ্যেও মনিরুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী আসন নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। এটি আবার পুনর্বিন্যাসের নামে বরুড়াকে বাদ দিয়ে লাঙ্গলকোট উপজেলাকে এ আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। এই আসনটি হয় কুমিল্লা ১০।
নতুন বিন্যাসেই মনিরুল হক চৌধুরী ২০১৮ এ প্রার্থী হন।পুরো আসনটিতেই মনিরুল হক চৌধুরীর গড়ে দেওয়া ভিত্তিমূলের বিএনপি তাঁকে ভোটে জয়লাভ করানোর জন্য জেল-জুলুম-নিপীড়ন উপেক্ষা করে উন্মুখ থাকে। মনিরুল হক চৌধুরী কারাগারে বন্দী আর হাসিনা সারাদেশের মতোই রাতে ভোট সম্পন্ন করে ক্ষমতা দখল করে নেন।
২০২৪ এ তো ডামি ভোট করেই হাসিনা ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার ও তথা বিএনপিসহ সারাদেশের নিপীড়িত গণমানুষের ‘হার না মানা’ আন্দোলনে সংঘটিত অভূতপুর্ব গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দলবলসহ পলাতক হন গত আগষ্টে।কিন্তু ১৫ বছরে গুম-খুন-জেল-জুলুম-অত্যাচারের শিকার হওয়া বিএনপির বিরুদ্ধে বরাবরের মতো ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এঁরা ব্যর্থ হবে জেনেও সক্রিয়। মনিরুল হক চৌধুরী তথা তাঁর এলাকার বিএনপির বিরুদ্ধেও সেটি চলছে। অকারণেই ‘পুরাতন বিএনপি’ নাম দিয়ে একটি নগন্য সংখ্যকের গোষ্ঠী এই অসফল বিভাজনটিতে ও অপপ্রচারে লিপ্ত। কোটারি স্বার্থে পূর্বে এঁরা একবার মনিরুল হক চৌধুরীকে উপেক্ষা করে উপজেলা ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটিও করেছিল। মনিরুল হক চৌধুরী সবসময়ই ছিলেন এলাকার মানুষের পাশে। বেগম জিয়া ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এটির মূল্যায়ন করে যাচ্ছেন যথার্থই। মনিরুল হক চৌধুরী ছিলেন ও আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তিনি দীর্ঘসময় ধরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তাঁর ধ্যানজ্ঞান এলাকার মানুষ, কুমিল্লার উন্নয়ন এবং তাঁর দল বিএনপির সমৃদ্ধি। এ লক্ষ্যে তাঁর অবিচলতা তাঁকে, এলাকার মানুষকে ও দলকে তাঁর এলাকায় অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থায় মনিরুল হক চৌধুরীর বিচক্ষণতায় কুমিল্লা দক্ষিণে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো যথাযথভাবে গঠিত হয়ে দল শক্তিশালী ও অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
কুমিল্লার এই নেতৃত্ব শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধরে রেখেছে।গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন- জীবনভর লড়াই করা দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় নেত্রী বেগম জিয়ার অপররিসীম ত্যাগ ও আদর্শকে ধারণ করে এই কমিটিগুলো জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করছে।এই কমিটিগুলো গণমানুষের ভালবাসায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নীতি ও নির্দেশনায়।
অবশ্যই এবং অতি অবশ্যই গুটিকয়েক বিভেদকারীর জন্য এলাকার তথা কুমিল্লার উন্নয়ন, মনিরুল হক চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টা-অবদান, এলাকার গণমানুষের অদম্য অগ্রযাত্রাসহ বিএনপির বিপুল জনপ্রিয়তা ও জনপ্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
এলাকার উন্নয়ন, সকলের অগ্রযাত্রা ও বিএনপির ঐক্য-আদর্শ-সমৃদ্ধি চিরঅম্লান থাকুক জনগণের মনেপ্রাণে সবসময়—এই হোক প্রত্যাশা ও প্রত্যয়।
মোতাহার হোসেন চৌধুরী,
লেখক, নিবন্ধকার, রাজনীতি-অর্থনীতি বিশ্লেষক ও গবেষক।
তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা ।
ddc99bd@gmail.com
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ