গ্রাহকের টাকা গায়েব: ইসলামী ব্যাংক বরুড়া শাখায় গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগ, ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়াধীন আইনি পদক্ষেপ ... ধারাবাহিক পর্ব-১
কুমিল্লা প্রতিনিধি :-
ভুক্তভোগীর টাকা গেল কোথায়? জবাব দিতে পারছে না কেউ'
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের স্থানীয় শাখায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রাহকের ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গ্রাহক হয়রানির ক্ষেত্রে ব্যাংকটির শাখাটি এখন সমালোচনার শীর্ষে। টাকা খোয়ানো ভুক্তভোগী গ্রাহক দ্রুত সুরাহার দাবি জানালেও শাখা ব্যবস্থাপক বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুই দিনের সময় নিয়েছেন।
ব্যাংকের হিসাব থেকে গ্রাহকের অর্থ গায়েব হওয়ার এই ঘটনায় শাখা ম্যানেজারের ভূমিকা এবং তার দেওয়া দুই দিনের সময়ক্ষেপণকে গুরুতর সন্দেহের চোখে দেখছেন ভুক্তভোগী ও আইন বিশেষজ্ঞরা। এটি নিছক ভুল নয়, বরং এটি একটি ব্যাংকিং জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সেলিনা বেগম জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আমি বরুড়া ইসলামী ব্যাংকে আমার স্বামী মো. সহিদ খানের অ্যাকাউন্টে (নং 20254210200999***) থাকা ১ লক্ষ ৫৪ ৩৮৯ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে আমার স্বামীর অনুমতিতে আমি তার এটিএম কার্ড নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বরুড়া শাখায় গেলে, নাম অজানা ব্যাংকের কর্মকর্তা আমাকে একটা মেশিন হাতে দিয়ে বলে আপনি এখানে আপনার পিন নাম্বার দেন। আমি পিন নাম্বার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর বলে আমাদের সার্ভার ডাউন তাই এখান থেকে আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। বয়োবৃদ্ধ সেলিনা বেগম এসব না জানায়, পরে ব্যাংক থেকে বাহির হয়ে এটিএম বুথ থেকে ২০-২০-১০ ৩বারে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি চলে যায়।
প্রবাসে থাকা তার স্বামী রাতে তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে কত টাকা উত্তোলন করেছে? জবাবে সেলিনা বেগম বলেন ৫০ টাকা উত্তোলন করেছে। প্রবাসে থাকা তার স্বামী একাউন্ট চেক করে দেখে ১ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে কিন্তু তার স্ত্রী বলছে ৫০ হাজার টাকা। এই নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল ঝগড়া এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার কাছাছাছি চলে যায়।
পরে সেলিনা বেগম ইসলামী ব্যাংক বরুড়া শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করলে এই টেবিল সেই টেবিল দেখিয়েও করা হয় হয়রানী।
ভুক্তভোগী গ্রাহক সেলিনা বেগমের স্বামী মো. সহিদ খান স্পষ্ট জানিয়েছেন, তার অনুমোদন ছাড়া অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং বিধি অনুসারে, গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের জিম্মায় থাকা আমানত। গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ব্যাংকের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব। এই অর্থ উধাও হওয়ার অর্থ হলো:
১. অভ্যন্তরীণ জালিয়াতি: টাকা হয়তো কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা অসৎ উপায়ে সরিয়ে ফেলেছেন।
২. দুর্বল নিরাপত্তা: ব্যাংকের সিস্টেম দুর্বল, যার সুযোগে বাইরের কেউ জালিয়াতি করেছে।
উভয় ক্ষেত্রেই, শাখা ম্যানেজার এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগের উপর কর্তব্যে অবহেলার কারণ বলেও জানান তিনি।
টাকা খোয়ানোর পর প্রতিকার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে যে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, তা গ্রাহক অধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন। বারবার ব্যাংকে আসা-যাওয়া করানো, সঠিক তথ্য না দেওয়া এবং দ্রুত তদন্ত শুরু না করা - এই সবই ম্যানেজারের দায়িত্ব অস্বীকারের শামিল।
শাখা ম্যানেজার দুই দিনের সময় নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে: একজন গ্রাহকের জীবনধারণের অর্থ উধাও হওয়ার পর কেন দ্রুততম সময়ে তদন্ত শুরু হলো না? এই সময়ক্ষেপণ কী প্রমাণের অভাবে, নাকি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দুই দিনের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত না আসে বা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়, তবে গ্রাহক সরাসরি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা (Criminal Case) দায়েরের অধিকার রাখেন। এই ধরনের মামলায় ব্যাংকের প্রধান হিসেবে ম্যানেজারের ব্যক্তিগত জবাবদিহি নিশ্চিত হতে পারে, যার ফলে তাকে পুলিশি জেরার সম্মুখীন হতে হবে।
এটি এখন আর সাধারণ গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্ক নেই, এটি একটি আর্থিক অপরাধের ঘটনা। ম্যানেজার যদি প্রমাণ করতে না পারেন যে এই টাকা কীভাবে গায়েব হলো, তবে তার বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠবে।" – মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইন বিশেষজ্ঞ (আলতাম চৌধুরী মিয়া।)।
যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এই ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়ানো সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দ্রুত এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপই পারে তাদের সুনাম রক্ষা করতে।
এ বিষয়ে বরুড়া ইসলামী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহ আরমান ২দিনের মধ্যে এই অর্থ গাহকের একাউন্টে ফেরত দেওয়ার আশা দিয়ে বলেন, "এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আমরা ইতোমধ্যে গ্রাহকের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ও সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাংকিং প্রক্রিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে ত্রুটি হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হয়েই আমরা আগামী ২ দিন (৪৮ঘন্টা)র মধ্যেই গ্রাহকের টাকা তার একাউন্টে ফেরত দিবো।
এইদিকে ভোক্তভোগী সেলিনা বেগম তার এই হয়রানি এবং তার সংসার তচনচ করে দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। আগামীকাল ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী এ্যাডভোকের সামছুল সিদ্দিকী।
এইদিকে ইসলামী ব্যাংক বরুড়া শাখার শাখা ব্যাবস্থাপক মোঃ শাহ আরমান তাকে করা ১৪টি প্রশ্নের মধ্যে কোন জবাব দিতে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারেননি। এতেই বুঝা যায় হয়ত গ্রাহকের এই টাকা ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাঝে কেউ নিয়ে গেছে যা শাখা ব্যবস্থাপকের যোগ সাজেশেও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। .................. ধারাবাহিক পর্ব-২ দেখুন আগ
সম্পাদনা পরিষদ -
প্রধান উপদেষ্টা : অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল
প্রধান সম্পাদক : মোঃ মনিরুজ্জামান
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ হারিসুর রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : এম এফ ইসলাম মিলন
ঠিকানা : মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০, মোবাইল : +88 018 2440 4444
© All rights reserved 2024 সংবাদ সারাদেশ