নুরা পাগলার কবরের ঘটনায় দায় কার?
আমার শহর ফরিদপুর থেকে আধাঘন্টা/চল্লিশ মিনিটের পথ গোয়ালন্দ। সেখানে একজন মানুষের কবর ঘিরে চরম নৈরাজ্য এবং লাশ অবমাননার ঘৃণিত ঘটনা ঘটেছে। যাকে নিয়ে সারাদেশে তুমুল আলোচনা সেই মৃত ব্যক্তির নাম নুরা পাগলা।
নুরুল হক মোল্লা বা নুরা পাগলা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার পাচ নম্বর ওয়ার্ডের হাতেম মোল্লার ছোট ছেলে। কৈশোর বয়স থেকে মাটির বদনা বাজিয়ে গান বাজনা শুরু করলেও পরবর্তীতে আশির দশকে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করে দরবার প্রতিষ্ঠা করে। যা ছিলো স্পষ্টতই ভন্ডামি। পরবর্তীতে স্থানীয় মুসল্লিদের আন্দোলনের মুখে ১৯৯৩ সালে মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়েন। পরে আবার ফিরে এসে দরবারের কার্যক্রম চালু করেন। নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবী করা ছাড়াও ধর্মবিদ্বেষী নুরা পাগলা পবিত্র আল কুরআনকে ‘ভুজপাতা’ বা মূল্যহীন বলতেন। নিজস্ব কালেমা চালু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীদেরকে দাফনের সময় মাথা দক্ষিণমুখী এবং পা উত্তরমুখী করে কবর দিতে বলতেন। মৃত্যুর পর ভক্তদেরকে তার কবরকে তাওয়াফ করার অসিয়ত করে গেছেন।
গতবছর অক্টোবর মাসেও স্থানীয় আলেম-মুসল্লিরা সমাবেশ করে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে নুরা পাগলার বিরুদ্ধে ভন্ডামির অভিযোগ দিয়েছিলেন। মুসল্লিদের অভিযোগ—নুরা পাগলা নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করে বহু বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধোকা দিয়ে আসছে। তাদের দিয়ে শিরকের মতো কঠিন গোনাহ করাচ্ছে। তার বড় ছেলে মেহেদী নুরতাজ ওরফে নুরতাজ নোভা ঢাকা, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গড়ে খৃস্ট ধর্মের প্রচারনা চালাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে মুসলমানদের আন্দোলনের মুখে নুরাল পাগলা আর এ সকল কর্মকান্ড করবেনা বলে মুচলেকা দেয়। কিন্তু তিনি তার ইসলাম বিরোধী অপকর্ম বন্ধ করেননি। মুসল্লিদের এই দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন— আমার কাছে এর আগেও এ বিষয় নিয়ে আলেম-ওলামারা এসেছিলেন। আমি ইতিমধ্যে নুরুল হককে তার কর্মকান্ড বন্ধ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবারও বলব।
নুরা পাগলা এবছরের ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি কাবা শরীফের আদলে উঁচু বেদি নির্মাণ করেন। মৃত্যুর পর ওই বেদিতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয় তাকে। অভিযোগ রয়েছে, তাকে দক্ষিণমুখী মাথা দিয়ে দাফন করা হয়েছে, যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী। প্রতি শুক্রবার তাওয়াফ করার মতো করে ভক্তরা তার কবর প্রদক্ষিণ করতো বলে শোনা যায়।
মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচুতে নির্মিত এবং পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তৈরি এই কবরকে ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী দাবি করে আবারো ফুঁসে ওঠে সাধারণ মুসল্লি-আলেম সহ প্রায় সব ধরণের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। তারা এর প্রতিবাদে সমাবেশ, মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। কিন্তু ভন্ড নুরা পাগলার মুরীদরা তা শোনেনি। তারা কাবা ঘরের আদলে তৈরী কবর বেদীর কালো রং বদলে লোক দেখানো কিছু কাজ করেছে মাত্র। এ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা বারবার প্রতিবাদ করেছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ সবই জেনেছে, দেখেছে— ব্যবস্থা নেয়নি।
গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর স্থানীয়রা আবারো প্রতিবাদ শুরু করলে মাজারীরা সেই প্রতিবাদ মিছিলে হামলা চালায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিবাদকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা মাজার কমপ্লেক্সে ব্যাপক ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজটিও তারা করে ফেলে— তা হলো তীব্র ক্ষোভে নুরা পাগলা’র কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে রাস্তায় এনে পুড়িয়ে ফেলেছে। সার্বিক ঘটনার জন্য তৌহিদী জনতার ব্যানারে থাকা হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য কিছু মানুষের দোষ খোঁজা হচ্ছে। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। পাশাপাশি এইসব ভন্ডামির সাথে যারা জড়িত ছিলো সেইসব মাজারপূজারীদেরকেও ছাড় দেয়া যাবে না। তাছাড়া অথর্ব উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সময়মতো সমাধান না করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করার দায়ও এড়াতে পারেন না।